রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে চলমান করোনাভাইরাসের সংকটে সরকারি সহায়তার জন্য তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ১১নং ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে। সেই সরকারি সহায়তা তালিকায় দেখাযায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় থাকা ১০টাকা কেজি চাল প্রাপ্ত ব্যক্তি, হিন্দু ব্যক্তির নামের পাশে মুসলমান ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার ব্যবহার, বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তসহ আর্থিকভাবে স্বচ্ছ ব্যক্ত্যিরাও করোনাভাইরাসের সংকটে সরকারি সহায়তার জন্য তৈরি করা তালিকার অর্ন্তভৃক্ত হয়েছেন। ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নে এমন অনিয়ম এটাই প্রথম। ফলে পুরো এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে।
সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১১ নং ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসেইন মুহাম্মদ আদিল জজ মিয়া তার নামের নিজ আইডিতে গত ১৮মে করোনাভাইরাসের সংকটে সরকারি অর্থ সহায়তা তালিকার জন্য তৈরি করা ৪২০ জনের একটি নামের তালিকা প্রকাশ করেন। আর ঐ তালিকাতেই দেখা যায় এমন অনিয়ম।
প্রকাশিত তালিকায় অন্তর্ভূক্ত নামগুলোর মধ্যে রয়েছেন- তালিকার ক্রমিক নং অনুযায়ী ২২.আলতাব খা, ৪৭. অর্চনা রানী দাস, ৩২.মোঃ হেলাল, ৩৭.নিলুফা খাতুন, ৪৩.জুলেখা খাতুন, ৬৩. আনোয়ারা, ৬৫. ফাতেমা বেগম, ৬৬.সুফিয়া খাতুন, ২৭২.কমলা বেগম ও তার বোন হাজেরা খাতুন, ২৩০.ফাহিমা খাতুন, ২৮২.মীর হুসেন, ২৮১.খেলু মিয়া, ৪১০.সহিদ মিয়া, ৩৯০. আঃ কাদির, ৪০৫. অবলা রাণী, ৩৩০.এখলাছ মিয়া, ৩৩৪.হেলেনা খাতুন, ৩৪৫.ইছন মিয়া, ১৪৮.ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব, ২০৯.প্রবেশ দেব, ৩০৬.আংগুরা খাতুন, ১৪৩. মিলন রানী সরকার। তারা প্রত্যেকেই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা চাল প্রাপ্ত কার্ডধারী ব্যক্তি। এছাড়া এদের মধ্যে অনেকেই আবার সরকারের দেয়া ভিবিন্ন প্রকল্পেরও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। ক্রমিক নাম্বার ৬০. তারা বানু (বয়স্ক ভাতা প্রাপ্ত) তালিকায় তার নাম থাকা সত্ত্বেও সরকারের আর্থিক সহযোগিতার তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। ক্রমিক নাম্বার ৫৯. মো:শিশু মিয়া আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকা সত্ত্বেও এ সুবিধা ভোগ করছেন।
এদিকে দেখা যায়, ক্রমিক নং ৩.ধন মিয়া, ৪.কালা মিয়া, ৬.মিয়া ধন, ৯.সানু মোল্লা, ১৫.তাউছ মিয়া, ১৩.সাজু মিয়া, ১০.আছমা খাতুন,১৬.সমরাজ বেগম, ৫.হনুফা, ১৭.শাহ আব্দুল হেকিম ওয়ার্ড সদস্যর ঘনিষ্ট আত্মীয় বলে জানা যায় এবং অনেকেই স্বচ্ছল ও তাদের বাড়িঘরও পাকা।
মজার ব্যপার হলো-ক্রমিক নং ১৪.রিনা রাণী দাশ, তার নামের পাশে মুসলমানের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে।
যদিও রিনা রানী দাশের বাড়ি ব্রাহ্মণডুরা লেখা রয়েছে। কিন্তু তার নামের পাশের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার কারির বাড়ি ২নং ওয়ার্ড এর নোয়াগাও গ্রামে। মোবাইল নাম্বারের ব্যবহারকারীর নাম জেসমিন। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড়ও বইছে। কার টাকা কে পায়? হিন্দু লোকের নাম আর মুসলমানের মোবাইল নাম্বার দিয়ে কি ডিজিটাল চুরি? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
মোবাইল ব্যবহারকারী জেসমিনের বাবার সাথে কথা হলে তিনি জানান, রিনা রানী দাশ নামে কাউকে আমি চিনিনা। তাছাড়া আমাদের গ্রামে কোন হিন্দু পরিবার নেই।
তালিকায় অর্ন্তভুক্ত ক্রমিক নং ১৪৩. মিলন রানী সরকার। তিনি সরকারের দেয়া সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। মাটি কাটা থেকে শুরু করে ত্রাণ সহায়তাও পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে নামের পাশে স্বামীর নাম পরিবর্তন করা হয়। করোনা ভাইরাসে সরকারের দেয়া ২৫০০ টাকা অর্থ সহায়াতার তালিকায় দেখা যায়, তার নামের পাশে স্বামীর নাম ধীরেন্দ্র সরকার লেখা। আবার ১০টাকা কেজি চাল প্রাপ্ত তালিকায় তার নামের পাশে স্বামীর নাম দেয়া হয়েছে দেবেন্দ্র সরকার। আবার কোন কোন স্থানে পিতা লাল মোহনের নাম রয়েছে।
এভাবেই সরকারের দেয়া গরিব অসহায় মানুষের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা লুঠ করা হচ্ছে। সুবিধা ভোগীরা নিচ্ছে নিজেদের ভাগে।
সরজমিনে এলাকা ঘুরে জানা যায়, সরকারের দেয়া ২৫০০ টাকা অর্থ সহায়াতার যে তালিকাটি করা হয়েছে, পুরো তালিকায় স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। এমন অভিযোগ এলকাবাসীর। নিজ নিজ আত্মীস্বজনের নাম ও অন্যান্য সুবিধা ভোগকারীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করায় এলাকাবাসীর মধ্য তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের প্রতি জোড় দাবী জানান এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমি আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকারের দেয়া অর্থ সহায়তার একটি খসড়া তালিকা দেয়া হয়েছে। এটি যাচাই বাচাই করে ফাইনাল করা হবে। তাছাড়া অনিয়ম হয়েছে এমন অভিযোগ কেউ করলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।